লেখক: আরেফিন ইসলাম,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গোপালগঞ্জ।
❝মানিনা আমি শ্রেণী ভেদাভেদ,
জাতপাত সব দ্বন্দ্ব।
যুগে যুগে যারা করেছে এমন,
তারা সবই ধর্মান্ধ ❞
পৃথিবী সৃষ্টির অনতিকাল পরেই মানুষে মানুষে ছিলো না কোন ভেদাভেদ। ধর্ম-বর্ণ-জাতি নির্বিশেষে এক শিকারেই সকলের আহার হত।কারণ তারা সকলেই এক প্রভুর সৃষ্টি। সকলের জনক-জননী আদম ও হাওয়া। তারা সকলেই রক্ত-মাংসে গড়া মানুষ।সকলের পঞ্চইন্দ্রিয় এক। তারা কোন না কোন পিতার ঔরশে ও মাতার গর্ভে জন্ম নিয়ে সূর্যালোকের মুখ দেখেছে। কেউ শিকার করত হরিণ কেউবা মহিষ।কেউ ঘরে কেউবা বাহিরে শ্রম উৎসর্গ করতো।কিন্তু ক্রমাগত মানুষ সভ্য হয়েছে। জন্মে এসেছে পার্থক্য। যার জন্ম কোন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা ক্লিনিকে বা অন্য কোন প্রক্রিয়ায়, তারা উঁচু শ্রেণী। স্থান-কাল-পাত্রভেদে তারা ভিনগ্রহের প্রাণী। তাদের রক্ত হয় ভিনগ্রহের প্রাণীদের মত। অন্যদিকে যারা উল্লিখিত স্থানে জন্ম নিতে অক্ষম তারাই নিম্নবর্গের, নিম্ন মানের নিম্ন শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। এদের পেশা হয় কামার-কুমার,জেলে,তাতী,নাপিত,মুচি ইত্যাদি। আর ভিনগ্রহের প্রাণীদের পেশা হয়, ব্যাবসা-বানিজ্য,চাকুরী কিংবা আত্নঅহমিকা।পাঠক মনে একটা ভাবনার উদয় হতে পারে যে,নিশ্চয় লেখক মাল খেয়ে টাল হয়ে নির্বোধের মত বকবক করছে।যদি তাই না হবে, তাহলে সমাজে এত বৈষম্য কেন? জাতপাত বা শ্রেণী দ্বন্দ্ব কেন? সৈয়দ, শেখ,মুঘল,পাঠান, চৌধুরীটা কেন? ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়,বৈশ্য,শূদ্র কেন? কারা করলো এ বিভাজন। কোন সে গহীন অরণ্যের সভ্য প্রাণী? জানি উত্তর নাই! তাহলে শোন-যদি রক্ত-মাংসের গড়া আমরা সবাই।প্রভু এক, জন্মক্রিয়া এক,পঞ্চইন্দ্রীয় এক তবুও বিভাজনটা করেছে তারা, যারা মানুষ নামের অমানুষ,যাদের চোখ শকুনের চোখ, হাত শোষকের,জিহবা বিষাক্ত সাপের,যাদের জন্ম আজন্মই পাপ, রৌবর বা হাবিয়া যার চিরকাল বাসস্থান। এরা মানুষের ভূল ধরে নিজের পাণ্ডিত্য জাহির করতেই অভ্যস্থ।এরা পেশার বিভাজন করে গোষ্ঠীকে জাহির করতে চায়।এরা সমালোচক ও ধর্মান্ধ। এরা সভ্যতার ছোঁয়া পায়নি বলে এমন। তাই তো নজরুলের দুঃখের বাণী আজ স্মরণ হয়-
❝দেখিনু সেদিন রেলে,কুলি বলে এক বাবু সাব তারে নিচে দিল ঠেলে ফেলে,চোখ ফেটে এল জল, এমনি করিয়া কি জগৎ জুরিয়া মার খাবে দুর্বল? ❞হ্যা, দুর্বল কেবল সবলদের হাতে মারই খাবে।কারণ দুর্বলরা অসভ্য নয়। তারা রক্তচক্ষুর প্রতাপে দুনিয়া গ্রাস করে না।বৈধ আয়ের জোর কম তাই তো তারা দুর্বল।কিন্তু তারা সবল।মানব সভ্যতা এসেছে তাদেরই হাত ধরে। বন্য অসভ্য ও হিংস্র প্রানীরা তো সভ্যতার অনিষ্টকারী। তারা অরণ্য থেকে মুক্ত হলে দুনিয়া বিধ্বংসী হবে। পুড়ে দিবে অরণ্য। তারই উত্তরসূরীরা আজ পৃথিবীতে তান্ডব চালায়।বিভাজন করে মানব পেশা।আমার অভিপ্রায়, যে সুমহান সুউচ্চ পদ পেশায় থাকি না কেন, সেখান থেকেই আমি মিশে যেতে চাই সাধারণ ও দুর্বলদের মাঝে।কারণ সে পথ তো আমার আত্নঅহমিকায় ভরা।দূর বাতায়ন থেকে বাস্তবতা উপলব্ধি করা যায় না। সকলে মানুষ, সকল পেশাই মহান।তাই তো মিশে যেতে চাই কৃষকের দলে মাঠ কর্ষণ করে ফসল ফলাতে। কুলি-মুজুরদের দলে, কামার-কুমার,জেলে,তাতী ও সেলুন পেশার মাঝে।বুঝাতে চাই কোন বৈষম্য নয়, আমরা সবাই মানুষ। কামার,মুজুর,মুচি,সেলুন, জেলে সহ সব পেশাকে সম্মান জানিয়ে বলবো -পেশাই মানবতার ধর্ম,এবং এ ধর্মেই রয়েছে মুক্তি।
মন্তব্য